আনিস তপন: [৩] সারাদেশে যাত্রী সাধারণকে নিরাপদ, সাশ্রয়ী ও আরামদায়ক রেল সুবিধা দেয়ার লক্ষ্যে চলাচল করছে ৫৮ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন। 

[৪] রেলওয়ের ম্যানুয়েল অনুযায়ী, দীর্ঘ যাত্রার এসব ট্রেনে যাত্রীদের স্বাস্থ্য সম্মত, মানসম্মত খাদ্য ও পানীয় নির্ধারিত মূল্যে সরবরাহের লক্ষ্যে ২০২০ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের ট্রেনে ক্যাটারিং সার্ভিসে নিয়োগ ও নীতিমালা তৈরী করে। [৫] এই নীতিমালার ২ ধারার ২.২ উপধারায় বলা হয়েছে, ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনার জন্য প্রতিষ্ঠান মনোনয়ন/নির্বাচনের ক্ষেত্রে উন্মুক্ত দর পদ্ধতি প্রযোজ্য হবে। এই নীতিমালার আওতায় আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতে ক্যাটারিং কোম্পানি পরিচালিত হবে।

[৬] অভিযোগ রয়েছে, নীতিমালার থোড়াই কেয়ার করেন রেলের কিছু কর্মকর্তারা। তাই নীতিমালা হলেও বদল হয়নি তাদের নীতি। শীর্ষ কর্মকর্তাদের অন্ধকারে রেখে প্রতিবছরই হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা।

[৭] জানাগেছে, রেলের ৫৮ জোড়া ট্রেনের ৫১ জোড়া ট্রেনে উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ক্যাটারিং সার্ভিস নিয়োগ দেয়া হলেও ৭ জোড়া ট্রেনের ক্যাটারিং সার্ভিস রেখেছে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে। আর এই ৭ জোড়া ট্রেনের আয় থেকে পাওয়া কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন রেলওয়ের কিছু কর্মকর্তা। 

[৮] নাম প্রকাশে অনচ্ছিুক রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কয়েক কর্মকর্তা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস, পশ্চিমাঞ্চলের ঢাকা-রাজশাহী রুটের বনলতা এক্সপ্রেস, ঢাকা-বেনাপোল রুটের বেনাপোল এক্সপ্রেস, ঢাকা-পঞ্চগড় রুটের পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, ঢাকা-কুড়িগ্রাম রুটের কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস ও ঢাকা-চিলাহাটি রুটের চিলাহাটি এক্সপ্রেস এবং নতুন চালু হওয়া কক্সবাজার এক্সপ্রেসে দুর্নীতিবাজ এই চক্রটি ক্যাটারিং সার্ভিস দেয়ার জন্য উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান ছাড়াই চক্রটি নিয়োগ দিয়েছে নিজস্ব জনবল। বর্তমানে এই ট্রেনগুলো থেকে বছরে মাত্র ৬ লাখ টাকা সরকারি খাতে রাজস্ব হিসেবে দেয়া হচ্ছে। বিপরীতে অসাধু চক্র শুধু এই খাত থেকেই হাতিয়ে নিচ্ছে কয়েক কোটি টাকা। [৯] কর্মকর্তারা বলছেন, ২০২০ সালে প্রবর্তিত নীতিমালা অনুযায়ী উন্মুক্ত দর পদ্ধতিতে এসব ট্রেনে ক্যাটারিং সার্ভিস কোম্পানি নিয়োগ দেয়া হলে সরকারের আয় হত ৩ থেকে ৪ গুণ বেশি। ফলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এ নিয়ে রেল প্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশনে রেলের একাধিক অসৎ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ জানালেও ব্যবস্থা নেয়নি কোন কর্তৃপক্ষই।

[১০] অভিযোগ রয়েছে, ‘বাংলাদেশ রেলওয়ে ক্যাটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম সেল’ নিয়ন্ত্রণ করছে রেলওয়ের বাণিজ্যিক ও অপারেশন বিভাগের কিছু সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা। দুর্নীতিবাজ এই চক্রটি নির্দিষ্ট হারে মাসোহারা দিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে রাখেন। তারাই মূলত অপেশাদার লোক দিয়ে ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনা করছেন। এতে বেশি টাকা দিয়ে যাত্রীদের নিম্ন মানের খাবার সরবরাহের অভিযোগ যেমন রয়েছে, তেমনই ক্যাটারিং সার্ভিসের জন্য বেয়ারা ও ম্যানেজার পদে নিয়োগ দিয়ে তাদের কাছ থেকেও আদায় করা হয়েছে বিপুল অর্থ এমন অভিযোগও রয়েছে।

[১১] এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান এই প্রতিবেদককে বলেন, কক্সবাজার এক্সপ্রেসহ আরো যে কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেনে ক্যাটারিং সার্ভিস এখনো চালু হয়নি সেসব ট্রেনে দ্রুত দরপত্র আহবান করে ক্যাটারিং সার্ভিস চালু করতে গত মাসেই একটি নির্দেশনা দিয়েছি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের।

[১২] দুর্নীতির মাধ্যমে নিজস্ব ক্যাটারিং সার্ভিস পরিচালনা ও অর্থ আত্মসাতের মাধ্যমে সরকারের বিপুল রাজস্ব ক্ষতি প্রসঙ্গে মহাপরিচালক বলেন, এমন অভিযোগ পাওয়া গেলে অবশ্যই খোঁজ নেয়া হবে এবং তাতে রেলওয়ের কোন কর্মকর্তার সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। সম্পাদনা: সালেহ্ বিপ্লব